আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ কণ্ঠ সাধনা ।
কণ্ঠ সাধনা
কন্ঠ সাধনা
তানপুরার সঙ্গে কণ্ঠ সাধনা করা আবশ্যক। শিক্ষার সূচনায় প্রথম শিক্ষার্থী তানপুরার সঙ্গে কণ্ঠ সাধনায় কিছু অসুবিধা বোধ করতে পারেন। সে জন্য প্রথম অবস্থায় উপযুক্ত শিক্ষকের অধীনে অভ্যাস করা প্রয়োজন। কিছুকাল একাদিক্রমে অভ্যাস করার পর খড়জের (সা) স্থান (Scale) স্থির করা ও তানপুরার তার সুরে মেলানোর ক্ষমতা আয়ত্ত হলে আর অসুবিধার কিছু থাকে না।
কন্ঠ সাধনার পক্ষে প্রাতঃকাল প্রশস্থ। তার মধ্যে ভোরে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত সময় সর্বাপেক্ষা উপযোগী। ছয় ঋতুর মধ্যে শীতকাল কন্ঠ সাধনার পক্ষে সর্বোৎকৃষ্ট সময়। কারণ শীতকালের আবহাওয়া দীর্ঘ সময়ব্যাপী সাধনা দ্বারা কণ্ঠ প্রস্তুতির পক্ষে বিশেষ উপযোগী।
শারীরিক স্বাস্থ্য ও কন্ঠের সুস্থতা রক্ষার জন্য নিয়মিত ভ্রমণ, সাঁতার, যোগব্যায়াম বা প্রাণায়াম করা উচিত। শেষোক্ত দুটি অভ্যাস করতে হলে উপযুক্ত গুরুর নির্দেশ লওয়া আবশ্যক। মিতাহার ও মিতাচার গায়ক গায়িকার পক্ষে অবশ্য প্রয়োজন ।
সঙ্গীতের ক্ষেত্রে, ভাষার স্বরবর্ণ বা ব্যঞ্জনবর্ণের মতোই উপাদান রয়েছে। আর তা হলো সরগম। সঙ্গীতের এই সরগম ৭টি। যথাঃ সা, রা, গা, মা, পা, ধা, না। এই ৭টি স্বরের উপরই সঙ্গীতের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত। ৭টি স্বর সাধনার মাধ্যমেই একজন শিল্পী সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করে। প্রথমে সহজ সরল সরগম ও পরে পাল্টা । এভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে সঙ্গীতের অনুশীলন শুরু করতে হয় ।
হারমোনিয়মের সুর যদি মিষ্টি এবং সুরেলা না হয়, তাহলে ঐ বাজে হারমোনিয়মের মতই গলার আওয়াজও কর্কশ এবং বেসুরো হয়ে যাবে। কাজেই এসব ক্ষেত্রে শিক্ষককে দেখিয়ে বাজনাটি পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভাল।
হারমোনিয়মের যে সাদা কালো পর্দা আছে সেগুলোর যে কোন পর্দা থেকেই ‘সা’ শুরু করা যেতে পারে। তবে সকলের গায়ের জোর যেমন এক রকম হয় না, তেমনি সকলের গলার জোরও এক রকম হয় না। তাই এক-একজনার গলার জোর বা ওজন অনুযায়ী এক একটি পর্দা থেকে এক একজন ‘সা’ শুরু করে থাকে।
এ ব্যাপারে ভাল শিক্ষকের পরামর্শে নেওয়া প্রয়োজন । অধিকাংশ শিশু শিক্ষার্থীদের গলা ‘এ’ শাপ বা ‘বি’ ফ্ল্যাটে হয়ে থাকে। নিম্নে একটা ছবির সাহায্যে হারমোনিয়মের রীড বা পর্দার অবস্থান দেখানো হলো-
পাশ্চাত্য সঙ্গীত পদ্ধতিতে আরোহীতে কালো পর্দাগুলো পূর্ববর্তী সাদা পর্দার শাপ নোট হয়ে যায় এবং অবরোহীতে কালো পর্দাগুলো পরবর্তী সাদা পর্দার ফ্ল্যাট নোট হয়ে যায়। ছবিতে নিচের সাদা পর্দাগুলোতে A, B, C, D, E, F, G লেখা আছে আর উপরের কালো পর্দাগুলোতে লেখা আছে CM, DE, F,G”, A# সাপ মানে তীব্র বা চড়া। আর ফ্ল্যাট মানে নরম বা কোমল। এইভাবেই সবগুলো পর্দা সাজানো আছে।
অনেক ছেলে বা মেয়েরা G# B, C, C থেকে ‘সা’ শুরু করে থাকে। কিন্তু তার গলার ওজন বুঝে তবে মন্দ্র সপ্তকের কমপক্ষে ‘পা’ স্বর থেকে শুরু করে তার সপ্তকের ‘র্গা’ স্বর পর্যন্ত সহজে ওঠা নামা করতে পারে। এমন ভাবেই পর্দার বা স্কেল এর মাপ ঠিক করতে হবে। গলার ওপর যেন অত্যাধিক চাপ না পড়ে।
আরও দেখুন: