আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ সঙ্গীতে স্বরলিপির প্রয়োজনীয়তা।
সঙ্গীতে স্বরলিপির প্রয়োজনীয়তা
সঙ্গীতে স্বরলিপির প্রয়োজনীতা
প্রাচীনকালে অন্যান্য সকল বিদ্যার ন্যায় সঙ্গীত বিদ্যাও গুরুমুখে শুনে শিখতে হতো । শুনে শিখতে হতো বিধায় বেদের অপর নাম দেওয়া হয়েছিল শ্রুতি । কালক্রমে লিপির আবিষ্কার হলে এবং সঙ্গীতবিদ্যা সম্বন্ধীয় গ্রন্থাদি রচিত হলেও সঙ্গীত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রত্যক্ষ এবং মৌখিক রয়ে গিয়েছিল।
গুরুর সম্মুখে বসে এবং তাঁর মুখ হতে শুনে এবং দেখে, গীত, বাদ্যদি শিক্ষা করতে হয়। এই ব্যবস্থা বর্তমান কাল পর্যন্ত চলে আসছে। গুরুর নিকট হতে প্রত্যক্ষভাবে শিক্ষা লাভ অত্যাধিক উত্তম তাতে কোন দ্বিমত নেই ।
কিন্তু এই শিক্ষা পদ্ধতির জন্য একটি অসুবিধা এবং অভাবও সৃষ্টি হয়েছে। কোন মহান শিল্পীর মৃত্যুর পর তাঁর সৃষ্টি ও সঙ্গীত লিপিবদ্ধ না থাকায় এবং উপযুক্ত সংখ্যক শিষ্য না থাকায় ঐ সকল সৃষ্টির অধিকাংশ বিলুপ্ত হয়ে যায়। এইভাবে যে কত গান লুপ্ত হয়েছে, শুধু স্বরলিপির না থাকার কারণে। স্বরলিপি না থাকলে কি রকম সুর কি ভাবে গাইতে হবে জানা মুস্কিল। এইখানে বুঝা যায় সঙ্গীতে স্বরলিপির কতটা প্রয়োজন ।
সঙ্গীত সংরক্ষণের জন্য স্বরলিপির গুরুত্ব অপরিসীম হলেও কেবলমাত্র স্বরলিপির সাহায্যে সঙ্গীতবিদ্যা আয়ত্ত্ব করা যায় না। কারণ কোন বিদ্যারই ক্রিয়াত্মক দিকটি পুঁথি হতে সম্যক লাভ করা যায় না। সঙ্গীত শিক্ষার জন্য গুরুর নিকট হতে তালিম নেওয়া একান্তই প্রয়োজন ।
সঠিক স্বরলিপি শিক্ষাগ্রহণ ও তার সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমেই এই সুর-বিকৃতি রোধ করা যায় এবং মূল সুরকে দীর্ঘকাল অবিকৃতভাবে ধরে রাখা সম্ভব। সঙ্গীত-শিক্ষকের শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে স্বরলিপির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন বহু-সংখ্যক বিবিধ গান সঠিক শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে শিক্ষকের অন্যতম অবলম্বন স্বরলিপির নিখুঁত জ্ঞান।
স্বরলিপির প্রয়োজনীয়তা বহুবিধ, যেগুলির মধ্যে অন্যতম সুরের সংরক্ষণের ক্ষেত্রে স্বরলিপির ভূমিকা। সঙ্গীত গুরুমুখী বিদ্যা, গুরুশিষ্য পরম্পরায় সেই সুপ্রাচীন কাল থেকে ভারতীয় সঙ্গীতের সম্পদগুলি প্রবাহিত হয়ে আসছে।
কিন্তু এই প্রবাহকালে একাধিক কারণে মূল সুরের বিকৃতি ঘটার সম্ভাবনা থাকে। প্রথমত বিস্মৃতির কারণে শিক্ষা করা প্রতিটি গান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মনে রাখা কোনও শিক্ষার্থীর পক্ষেই সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত নানা কারণে শিল্পী বা শিক্ষার্থীর দীর্ঘকালের চর্চার অনভ্যাসের ফলে, তৃতীয়ত সঠিক শিক্ষার অভাবে এবং সর্বোপরি শিল্পীর স্বেচ্ছাচারিতার কারণে।
সঠিক স্বরলিপি শিক্ষাগ্রহণ ও তার সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমেই এই সুর-বিকৃতি রোধ করা যায় এবং মূল সুরকে দীর্ঘকাল অবিকৃতভাবে ধরে রাখা সম্ভব। সঙ্গীত-শিক্ষকের শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে স্বরলিপির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন বহু-সংখ্যক বিবিধ গান সঠিক শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে শিক্ষকের অন্যতম অবলম্বন স্বরলিপির নিখুঁত জ্ঞান।
অন্যদিকে শিক্ষা করা গানটি নির্ভুল ভাবে চর্চা করা ও সঠিক ভাবে পরিবেশন করার জন্য সঙ্গীত-শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রেও স্বরলিপি শিক্ষা করা এবং তা চর্চা করা একান্ত প্রয়োজন। উপরন্তু স্বরলিপি পাঠের অভ্যাস সঙ্গীত শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে কণ্ঠের স্বরস্থান নিখুঁত করে তোলার চর্চার দিক থেকেও এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস বলে পরিগণিত হয়ে আসছে পাশ্চাত্যে এবং বর্তমান প্রাচ্যে।
আরও দেখুন: