ইন্দুবালা দেবী ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে (বাংলা ১০০৫, ১১ কার্তিক বুধবার) পাঞ্জাবের অমৃতসরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা প্রফেসর মতিলাল বসু প্রতিষ্ঠিত ‘বোসেস সার্কাস-এর তিনি এবং স্ত্রী রাজবালা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতেন। আতদিনের সুগায়িকা শ্রীমতী ইন্দুবালা মূলত সুরের পূজারী হিসেবে নিজের জীবন পরিক্রমা সুরু করেন।
ইন্দুবালা দেবী । শিল্পী জীবনী
এই সুমহান ব্রত যাপনে গৌরীশঙ্কর মিশ্র তাঁকে সঙ্গীতে হাতেখড়ি দেন এবং পরে তিনি কালীচরণ মিশ্রের কাছে তালিম নেন। এদের কাছে তিনি খেয়াল ও ঠুংরীতে তালিম পান। গৌরীশঙ্কর মিশ্রের বাড়ীতে সেই সময়কার প্রতিভাময়ী শিল্পী গহরজানের সঙ্গে তাঁর-পরিচয় ঘটে এবং তিনি তাঁর কাছে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
সঙ্গীতে আরও অধিক দক্ষতা অর্জনের জন্যে গহরজান ইন্দুবালাদেবীকে তালিম দেওয়া ছাড়াও গানের বিভিন্ন আসরে সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন এবং তাঁকে দিয়ে অনেক আসরে গান গাওয়াতেন।
হিজ মাস্টারস ভয়েসে তিনি প্রথম যে দুটি গান রেকর্ড করেন, সে দুটি হলো “ওরে মাঝী হরী হেথা” ও “তুমি এস হে”। এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে সেই সময় হিজ মাষ্টারস্ ভয়েস তাদের নিউজ বুলেটিন ইন্দুবালাদেবীকে ভারতের সর্ব্বপ্রথম অ্যামেচার আর্টিষ্ট হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। তিনি মাত্র তিন বৎসরের ব্যবধানে বেশ কিছু হিন্দী ভজন, ঠুংরী এবং বাংলা গান রেকর্ড করে সঙ্গীত জগতে নিজের আসন প্রতিষ্ঠিত করেন।
তাছাড়া শিল্পীর আরেকটি দিক তুলে না ধরলে তাঁর জীবনচিত্র অনেকটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তিনি বেশ কয়েকটি বাংলা, হিন্দি, উর্দু তামিল ইত্যাদি ছায়াচিত্রে নিজের অভিনয় প্রতিভাপ্রদর্শন করে ভুয়সী প্রশংসা অর্জন করেন। বাংলা, হিন্দি, উর্দু, তামিল, তেলেগু ও ওড়িয়া ইত্যাদি ভাষায় গ্রামোফোনে আনুমানিক তিনশোটি রেকর্ডের মাধ্যমে তাঁর সুকণ্ঠের স্বরলিপি আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন যা তৎসময়ে এই সংখ্যা অবিশ্বাস্য হলেও সঠিক তাঁর সঙ্গীত প্রতিভার জ্বলন্ত সাক্ষ্য বহন করে।
তাঁর জীবনের স্মরণীয় ঘটনাগুলির মধ্যে অন্যতম ঘটনা হলো, কাজী নজুল ইসলামের সাথে পরিচয়। তিনি কাজী নজরুলের গুরু ওস্তাদ জমীরুদ্দীন খাঁ সাহেবের সুরে অনেক গান রেকর্ড করেন। এমনকি স্বয়ং নজরুলের ট্রেনিংয়ে “রুমঝুম রুমঝুম” এবং “চেয়োনা সুনয়না আর” গান দুটি রেকর্ড করেন এবং পরে এক এক করে বহু নজরুল সঙ্গীত রেকর্ড করে । তিনি একজন প্রথম সারির নজরুল সঙ্গীতশিল্পী হিসাবে যথেষ্ট সুনাম অর্জ্জন করেন।