আজকের আলোচনার বিষয়: কণ্ঠ সাধনার জন্য কাহারবা, দাদরা, তেওড়া ও ঝাঁপতালে শুদ্ধ স্বরযোগে কতিপয় পাল্টা বা অলংকার। এই বিষয়টি বিশেষভাবে কণ্ঠসাধকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে ধ্রুপদী সংগীতচর্চার মূলভিত্তি – তান, অলঙ্কার ও স্বরচালনার নিয়ন্ত্রিত ও সচেতন অনুশীলন – সুসংবদ্ধভাবে চর্চা করার সুযোগ তৈরি হয়। হারমোনিয়াম ব্যবহারপ্রণালীর মাধ্যমে তাল ও সুরের সম্মিলিত চর্চা কণ্ঠসাধনাকে নিখুঁত করে তোলে।
কণ্ঠ সাধনায় তালের ভূমিকা
শুদ্ধ স্বরযোগে পাল্টা বা অলংকার সাধনার লক্ষ্য হলো কণ্ঠে সুরের বিশুদ্ধতা এবং স্বরের স্পষ্ট উচ্চারণ গড়ে তোলা। এ ধরনের চর্চায় তাল ও মাত্রা অনুযায়ী অলংকার বসিয়ে কণ্ঠকে ধাপে ধাপে গঠন করা হয়। তালে তালে অলঙ্কার চর্চা করলে তাল-সচেতনতা বাড়ে, লয়বোধ তৈরি হয় এবং কণ্ঠস্বর শুদ্ধ ও সুরেলাভাবে গঠিত হয়।
কাহারবা তাল (৮ মাত্রা)
-
বিভাগ: ২টি
-
ছন্দ: ৪+৪
-
তালি: ১ (প্রথম মাত্রা)
-
ফাঁক: ১ (পঞ্চম মাত্রা)
-
ব্যবহার: এই তালে সহজ পাল্টা ও অলংকার রচনা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ:
সা রে গা মা | পা ধা নি সা ||
সা – সা – গা – গা | মা – মা – পা – পা ||
🎵 পাল্টা/অলংকার ১
সা রে গা মা | পা ধা নি সা
🎵 পাল্টা/অলংকার ২
সা – সা – গা – গা | মা – মা – পা – পা
🎵 পাল্টা/অলংকার ৩
সা গা রে মা | পা নি ধা সা
🎵 পাল্টা/অলংকার ৪
সা রে মা গা | পা ধা সা নি
🎵 পাল্টা/অলংকার ৫
সা রে গা মা | গা রে সা রে
🎵 পাল্টা/অলংকার ৬ (আবরত অনুশীলনের জন্য)
সা রে গা মা | পা ধা নি সা ||
নি ধা পা মা | গা রে সা সা ||
এই পাল্টাগুলো প্রথমে মন্দ্র-সপ্তক থেকে শুরু করে মধ্য ও তার-সপ্তকে ধাপে ধাপে অনুশীলন করা যায়। গলার পরিসর ও স্বর শুদ্ধ করতে এগুলো ধীর লয়ে হারমোনিয়ামের সাথে নিয়মিত অনুশীলন করাই উত্তম।
দাদরা তাল (৬ মাত্রা)
-
বিভাগ: ২টি (৩+৩)
-
তালি: ১
-
ফাঁক: ৪
-
ব্যবহার: কোমল এবং মৃদু ছন্দের কারণে দাদরা তালে অলংকার গুলো হয়ে থাকে বেশি গীতিময়।
🎶 পাল্টা ১
সা রে গা | মা পা ধা
🎶 পাল্টা ২
সা – সা – রে | গা – গা – মা
🎶 পাল্টা ৩
সা গা রে | মা ধা পা
🎶 পাল্টা ৪
সা রে মা | গা পা ধা
🎶 পাল্টা ৫
সা রে গা | গা রে সা
🎶 পাল্টা ৬ (পূর্ণ ১ আবরত)
সা রে গা | মা পা ধা ||
পা মা গা | রে সা সা ||
তেওড়া তাল (৭ মাত্রা)
-
বিভাগ: সাধারণত 3+2+2
-
তালি: ১
-
ফাঁক: ৫
-
বিশেষতা: তেওড়া তালে পাল্টা ও অলংকারের অনুশীলন ছন্দজটিলতা মোকাবেলার অনুশীলনের একটি উৎকৃষ্ট মাধ্যম।
ছন্দ বিভাজন: 4 + 3
মাত্রা বিন্যাস: ১ ২ ৩ ৪ | ৫ ৬ ৭
তালি: ১ | ফাঁক: ৫
🎶 পাল্টা ১
সা রে গা | মা পা ধা
🎶 পাল্টা ২
সা – রে – সা | গা – মা – গা
🎶 পাল্টা ৩
সা গা রে | মা ধা পা
🎶 পাল্টা ৪
সা রে মা | গা পা ধা
🎶 পাল্টা ৫
সা রে গা | গা রে সা
🎶 পাল্টা ৬ (পূর্ণ তেওড়া আবরত অনুযায়ী)
সা রে গা মা | পা ধা সা’ ||
সা’ ধা পা | মা গা রে সা ||
ঝাঁপতাল (১০ মাত্রা)
-
বিভাগ: 2+3+2+3
-
তালি: ১ ও ৭
-
ফাঁক: ৪
-
বিশেষতা: এই তালের মধ্য দিয়ে অলংকারের দীর্ঘ এবং সংযুক্ত রূপ অনুশীলন করা যায়, যা গায়কির গঠন ও শ্বাসনিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
মাত্রা বিভাজন: 2 + 3 + 2 + 3
তালি: ১, ৩, ৮ | ফাঁক: ৬
মাত্রাগুলি:
১ ২ | ৩ ৪ ৫ | ৬ ৭ | ৮ ৯ ১০
🎶 পাল্টা ১
সা রে | গা মা পা | মা গা | রে সা রে
🎶 পাল্টা ২
সা – সা | রে – গা – | মা – মা | পা ধা পা
🎶 পাল্টা ৩
সা রে গা | রে গা মা | গা মা পা | মা পা ধা
🎶 পাল্টা ৪
সা গা | রে মা পা | গা পা | ধা নিঃ সা
🎶 পাল্টা ৫ (পূর্ণ ১ আবরত – দুঃত লয়)
সা রে গা মা | পা মা গা | রে গা মা | পা ধা নিঃ সা
পাল্টা বা অলংকার সাধনার কিছু দিকঃ
-
প্রতিটি অলংকারে শুদ্ধ স্বরের সঠিক উচ্চারণ ও সময়বোধ জরুরি।
-
হারমোনিয়াম অনুযায়ী স্বর মিলিয়ে চর্চা করলে কণ্ঠের সুর শুদ্ধতা বজায় থাকে।
-
ধীরে ধীরে গতি বাড়িয়ে মন্দ্র থেকে তারে অলংকার বিস্তার করা যায়।
-
পাল্টাগুলোর মাধ্যমে তান তৈরির প্রস্তুতি গড়ে ওঠে।
কণ্ঠ সাধনায় কাহারবা, দাদরা, তেওড়া ও ঝাঁপতালের মতো তালে অলংকার বা পাল্টা অনুশীলন একদিকে যেমন তাল-সচেতনতা ও রাগপ্রকৃতি অনুধাবনে সহায়তা করে, তেমনি গায়কির কাঠামো নির্মাণে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। শুদ্ধ স্বরযোগে এই চর্চা একজন সংগীতসাধককে ধীরে ধীরে উচ্চতর ধ্রুপদী সংগীতের পথে প্রস্তুত করে। হারমোনিয়াম সহযোগে এই প্রক্রিয়াটি আরও প্রাণবন্ত ও বাস্তবসম্মত হয়ে ওঠে।
এই অনুশীলনশৈলী নিয়মিতভাবে অনুসরণ করলে কণ্ঠশক্তি, তালবোধ ও রাগের অভ্যন্তরীণ গঠনবোধে নিশ্চিত অগ্রগতি সম্ভব।