Site icon Classical Gurukul [ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত গুরুকুল ] GOLN

রাগরূপ নির্ণয়

রাগরূপ নির্ণয়

উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত বা রাগ সঙ্গীত কলাবিদ্যা, যাকে আমরা সাধারণত শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বলি, এটি বহু প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত একটি সাংস্কৃতিক ধারা। প্রাচীন মুনিঋষি ও সঙ্গীত সাধকরা প্রকৃতি এবং মানুষের মানসিক অবস্থার গভীর পর্যবেক্ষণ করে নানা রাগ ও রাগিণী সৃষ্টি করেন। তাদের সৃষ্টি ছিল নিখুঁত ও মনোগ্রাহী, যা মানুষের অনুভূতি ও পরিবেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল।

রাগরূপ নির্ণয়

 

 

প্রাচীনকালীন রাগরাগিণীর ধারণা

প্রাচীন শাস্ত্রে রাগকে একটি নির্দিষ্ট রূপে গোষ্ঠীবদ্ধ করা হয়েছিল। শিবমতে ছয় রাগের কথা উল্লেখ আছে, যা হল:

১. ভৈরব
২. নটনারায়ণ
৩. পঞ্চম
৪. মেঘ
৫. বসন্ত
৬. শ্রী

প্রতিটি রাগের ছয়টি রাগিণী থাকত, ফলে ছয় রাগ ও ছত্রিশ রাগিণী হিসেবে একটি সুবিন্যস্ত সংগীতপদ্ধতি গড়ে ওঠে।

দশটি প্রধান ঠাট আধুনিক রাগরূপ নির্ণয়

বর্তমানে, বিশেষ করে উত্তর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে, পন্ডিত ভাতখণ্ডের মতে দশটি প্রধান ঠাট (Thaat) ধরা হয়, যাদের লক্ষণ অনুসারে সমস্ত রাগরূপ নির্ণয় করা হয়। এই দশটি ঠাট হলো:

প্রতিটি রাগ এই দশটি ঠাটের কোনো একটির অধীনে পড়ে এবং ঠাটের স্বর ও ছন্দ অনুসারে তার নির্দিষ্ট রাগরূপ নির্ধারিত হয়।

 

 

 

বাদীস্বর অনুসারে রাগ পরিবেশন

রাগ পরিবেশনের সময় বাদীস্বর (Principal Note) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাদীস্বরের অবস্থান অনুযায়ী রাগের পরিবেশনের সময় নির্ধারণ করা হয়। এখানে স্বর সপ্তককে দুই ভাগে ভাগ করা হয়:

অনেকে ভুল ধারণা পোষণ করেন যে, ‘মা’ বাদী হলেও রাগ পূর্বাঙ্গের হবে এবং ‘পা’ বাদী হলেও উত্তরাঙ্গের — কিন্তু বাস্তবে বাদীস্বর ও রাগের বৈশিষ্ট্য অনুসারে এ ধরনের পার্থক্য থাকে।

সময় অনুসারে রাগ পরিবেশন

দিবা-রাত্রির ২৪ ঘণ্টাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়:

যদি রাগের বাদীস্বর সপ্তকের পূর্বাঙ্গে থাকে (সা, রা, গা, মা), তবে সেই রাগ দিনের বেলা (দিবা ১২টা থেকে রাত ১২টা) পরিবেশন করা হয়। যেমন:

অন্যদিকে, যদি বাদীস্বর উত্তরাঙ্গে থাকে (পা, ধা, না, সা), তবে সেই রাগ রাতের বেলা (রাত্রি ১২টা থেকে পরের দিন দুপুর ১২টা) পরিবেশন করা হয়। যেমন:

রাগরূপ নির্ণয়ের অতিরিক্ত দিক

রাগরূপ নির্ণয়ে বাদীস্বর ছাড়াও অন্যান্য বিষয় যেমন —

এগুলোও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, বসন্ত ঋতুর রাগগুলো সাধারণত প্রাণবন্ত ও প্রাণোচ্ছল হয়, যেখানে কার্ভীর ঠাটের রাগ গুলো মনকে প্রশান্ত করে।

 

 

রাগরূপ নির্ণয় হলো রাগের ধরণ, ঠাট, বাদীস্বর এবং পরিবেশনের সময়কাল বিচার করে রাগকে শ্রেণীবদ্ধ করার প্রক্রিয়া। এটি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মৌলিক ভিত্তি যা সঙ্গীতশিল্পীদের জন্য অপরিহার্য। রাগরূপ ঠিকঠাক বুঝে পরিবেশন করলে শ্রোতার হৃদয়ে রাগের প্রকৃত অনুভূতি ও ভাব পৌঁছায়।

 

Exit mobile version