Site icon Classical Gurukul [ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত গুরুকুল ] GOLN

রাগের সময় চক্র

রাগের সময় চক্র

ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে রাগ কেবল একটি সুরের ধারা নয়, বরং এটি একটি জীবন্ত অনুভূতি যা নির্দিষ্ট সময়ে পরিবেশিত হলে পূর্ণতা লাভ করে। প্রাচীন গুরুদের বিশ্বাস ছিল, প্রতিটি রাগের একটি নিজস্ব সময় আছে — ভোর, দুপুর, সন্ধ্যা বা রাত্রি — যখন তা শ্রোতার মনে সর্বোচ্চ আবেগ জাগাতে সক্ষম হয়। এই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে “রাগের সময় চক্র” বা “থিয়োরি অব টাইম অফ রাগা”। এই প্রবন্ধে আমরা রাগ ও সময়ের সম্পর্ক, তার ঐতিহাসিক ভিত্তি, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ এবং আধুনিক প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করব।

রাগের সময় চক্র

 

 

রাগের সময় চক্র

রাগ পরিবেশনের সময়কে সাধারণত দুই প্রকারে ভাগ করা হয়েছে। যেমন- রাগে ব্যবহৃত স্বর অনুসারে ও রাগের বাদীস্বর অনুসারে। রাগে ব্যবহৃত স্বর অনুসারে রাগ পরিবেশনের সময়- স্বরসপ্তকে শুদ্ধ ও বিকৃত মিলে মোট ১২টি স্বর থাকে । কেবল শুদ্ধ স্বর দ্বারা অথবা শুদ্ধ ও বিকৃত স্বরের সংমিশ্রণেও রাগ গঠিত হতে পারে।

এই শুদ্ধ ও বিকৃত স্বরের সমন্বয়ে গঠিত সঙ্গীতের রাগগুলোকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমনঃ

১) ঝা, দা কোমল ও গা শুদ্ধযুক্ত রাগঃ ব্যতিক্রম হিসাবে বা শুদ্ধ থাকতে পারে। পরিবেশনের সময় সকাল এবং সন্ধ্যা ৪টা হতে ৭টা পর্যন্ত।

২) শুদ্ধ রা, ধা যুক্ত রাগঃ গা-ও শুদ্ধ থাকবে। পরিবেশনের সময় দিবা ও রাত্রির ৭টা হতে ১০টা বা ১২টা পর্যন্ত।

৩) কোমল জ্ঞা, ণা যুক্ত রাগঃ পরিবেশনের সময় দিবা ও রাত্রির ১০টা বা ১২টা হতে ৪টা পর্যন্ত । এখানে ভোর ৪টা হতে পরদিন ভোর ৪টা পর্যন্ত সময়কে সম্পূর্ণ দিন ধরা হয়েছে।

 

 

দিবাভাগে-

১) ভোর ৪টা হতে বেলা ৭টা পর্যন্ত পরিবেশন করতে হবে কোমল ঝা, দা, ও শুদ্ধ গা যুক্ত রাগ। ব্যতিক্রম হিসাবে ধা শুদ্ধ থাকতে পারে। এই সময়ের রাগগুলোকে প্রাতঃকালীন সন্ধিপ্রকাশ রাগ বলা হয়। যেমনঃ ভৈরব ঠাট হতে- ভৈরব, রামকেলী, কালিংগড়া প্রভৃতি। পূরবী ঠাট হতে পরজ, বসন্ত প্রভৃতি। মারবা ঠাট হতে- ললিত, সোহিনী প্রভৃতি ।

২) বেলা ৭টা হতে বেলা ১০টা পর্যন্ত পরিবেশন করতে হবে শুদ্ধ রা, ধা, যুক্ত রাগ । ইহাতে গা-ও শুদ্ধ থাকবে। যেমন- বিলাবল ঠাট হতে বিলাবল, আলাহিয়া, দেশকার প্রভৃতি । কল্যাণ ঠাট হতে- গৌড়সারং, হিন্দোল প্রভৃতি। খাম্বাজ ঠাট হতে- গারা প্রভৃতি ।

৩) বেলা ১০টা বা ১২টা হতে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পরিবেশন করতে হবে কোমল জ্ঞা, ণা যুক্ত রাগ । যেমন- কাফী ঠাঁট হতে- ভীমপলশ্রী, বৃন্দাবনী সারং, পিলু প্রভৃতি। আসাবরী ঠাট হতে- আসাবরী, জৌনপুরী, দেশী প্রভৃতি। ভৈরবী ঠাট হতে- ভৈরবী, বিলাসখানী টোড়ী প্রভৃতি ।

 

 

রাত্রিভাগে-

১) বিকাল ৪টা হতে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পরিবেশন করতে হবে কোমল ঝা, দা ও শুদ্ধ গা যুক্ত রাগ। ব্যতিক্রম হিসাবে ‘ধা’ শুদ্ধ থাকতে পারে। এই সময়ের গীত রাগগুলোকে সায়ংকালীন সন্ধিপ্রকাশ রাগ বলা হয়। যেমন- ভৈরব ঠাট হতে- গৌরী। পূরবী ঠাট হতে- পূরবী, শ্রী, পুরিয়াধানেশ্রী প্রভৃতি। মারবা ঠাট হতে মারবা, পুরিয়া প্রভৃতি ।

২) সন্ধ্যা ৭টা হতে ১০টা বা ১২টা পর্যন্ত পরিবেশন করতে হবে শুদ্ধ রা, ধা যুক্ত রাগ । ইহাতে গা-ও শুদ্ধ থাকবে। যেমন- বিলাবল ঠাট হতে-দূর্গা। কল্যাণ ঠাট হতে- ইমন, কেদার, কামোদ প্রভৃতি। খাম্বাজ ঠাট হতে খাম্বাজ, তিলককামোদ, জয়জয়ন্তী প্রভৃতি ।

৩) রাত্রি ১০টা বা ১২টা হতে ভোর ৪টা পর্যন্ত পরিবেশন করতে হবে কোমল জ্ঞা, গা যুক্ত রাগ । যেমন- কাফী ঠাট হতে-কাফী, বাগেশ্রী, বাহার প্রভৃতি। আসাবরী ঠাট হতে- আড়ানা, দরবাড়ী কানাড়া প্রভৃতি । ভৈরবী ঠাট হতে- মালকোষ প্রভৃতি ।

আরও দেখুন:

Exit mobile version