আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ শ্রুতি ও স্বর।
শ্রুতি ও স্বর
শ্ৰুতি
শ্রুতি হলো শ্রবণযোগ্য স্বর। এইরুপ ২২টি সূক্ষ্ম স্বরকে শ্রুতি বলা হয়। ২২টি শ্রুতি থেকে ৭টি শুদ্ধ স্বর উৎপন্ন হয়। ৭টি শুদ্ধ স্বরের নিম্নলিখিতভাবে শ্রুতিতে অবস্থানক্রম হয়।
শ্রুতিগুলোর নাম অনুসারে অবস্থানক্রম
উদাত্তঃ যে স্বরের দুইটি শ্রুতি থাকে তাকে উদাত্ত বলা হয়। যেমন- গা ও নি । উচ্চ ধ্বনিকে উদাত্ত বলে।
অনুদাত্তঃ যে স্বরে তিনটি শ্রুতি থাকে তাকে অনুদাত্ত বলা হয়। যেমন- রে ওধা। নি ধ্বনিকে অনুদাত্ত বলে। স্বরিতঃ যে স্বরে চারটি শ্রুতি থাকে তাকে স্বরতি বলা হয়। যেমন- সা, মা ও পা। সমান ধ্বনিকে অনুদাত্ত বলে।
গ্রামঃ ২২টি শ্রুতির বা ৭টি স্বরের সমবেত রুপকে গ্রাম বলে ।
নাদ ও শ্রুতি
নাদ
১। প্রণবময় মধুর ধ্বনিই হচ্ছে নাদ ।
২। নাদ হতেই সঙ্গীতের উদ্ভব।
৩। নাদ দুই প্রকার আহত ও অনাহত
৪। আহত নাদ স্পষ্ট শ্রুত হয়।
৫। অনাহত নাদ সঙ্গীতের ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয়।
৬। নাদের উচ্চতা ও নিম্নতা অনুসারে ছোট বড় ভেদ আছে।
৭। স্থির এবং নিয়মিত আন্দোলন যুক্ত
শ্ৰুতি
১। শ্রবণেন্দ্রিয় গ্রাহ্য ধ্বনিকে বলা হয় শ্রুতি ।
২। শ্রুতির উপরেই স্বরের প্রতিষ্ঠা।
৩। শ্রুতির সংখ্যা ২২টি।
৪। ২২টি শ্রুতিই সঙ্গীতে প্রয়োজনীয়।
৫। শ্রুতিগুলোর মধ্যে পরস্পরের পার্থক্য যথেষ্ট স্পষ্ট হয়।
৬। শ্রুতিগুলোর অবস্থান নিম্ন হতে ক্রমে উচ্চাভিমুখী।
৭। কণ, স্পর্শ, মীড় প্রভৃতি মাধ্যমে শ্রুতির প্রকাশ ।
৮। ২২টি শ্রুতির পৃথক নাম আছে।
৯। পরস্পর পার্থক্যসহ শ্রুতির উৎপাদন বিশেষ সাধনা সাপেক্ষ।
১০। বিশেষ এক একটি শ্রুতি বিশেষ স্বর নিৰ্দ্দেশক ।
শ্রুতি ও স্বরের সমতা ও বিভিন্নতা
॥ সমতা ॥
১। শ্রুতি ও স্বর দুইই হবে সঙ্গীতোপযোগী আওয়াজ।
২। সঙ্গীতে পরস্পরের পার্থক্যসহ দুইটিই স্পষ্ট শোনা যায়।
৩। সর্প ও তার কুন্ডলী কিংবা স্বর্ণ ও স্বর্ণালঙ্কারের যে সম্পর্ক শ্রুতি ও স্বরের সম্পর্ক সেই প্রকার ।
৪। দুইটির হবে শ্রোত চিত্তরঞ্জনকারী।
॥ বিভিন্নতা ॥
১। বিশ্বাবসু বলেছেন, কর্ণ, স্পর্শ বা মীড়ের দ্বারা শ্রুতির প্রকাশ এবং ওইগুলোতে অবস্থান করলে স্বর হবে।
২। শ্রুতির সংখ্যা ২২টি, স্বরের সংখ্যা ১২টি।
৩। সঙ্গীত রচনায় স্বরই মূখ্য, শ্রুতি গৌণ।
৪। শ্রুতি হচ্ছে স্বরের সুক্ষ্মতর বিভাগ।
৫ । বিশেষ বিশেষ শ্রুতির উপর ১২টি স্বরের অবস্থান।
৬। ‘সঙ্গীত তরঙ্গ’ গ্রন্থে স্বর ও শ্রুতির পার্থক্য স্পষ্ট করে বোঝাবার জন্য স্বরগুলোকে পুরুষ এবং শ্রুতিগুলোকে রমণী বলে বর্ণনা করা হয়েছে, কারণ স্বরগুলোর গতিবিধি পুরুষের মত সর্বগোচর, প্রকাশ্য, স্পষ্ট, কিন্তু শ্রুতিগুলোর গতিবিধি লজ্জাশীলা রমণীর মত সংগোপনে অর্থাৎ অস্পষ্ট, সাধারণের অগোচরে। শ্রুতিগুলোর অবস্থান কাছাকাছি। স্বরগুলোর একটি হতে অপরটি দূরে অবস্থিত ।
আরও দেখুন: