আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ ঠাটের সংগা,পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য ।
ঠাটের সংগা,পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
ঠাট
ঠাট শব্দের অর্থ কাঠামো। নাদ থেকে স্বর, স্বর থেকে সপ্তক এবং সপ্তক থেকে ঠাটের সৃষ্টি হয়েছে। রাগ উৎপাদনে সমর্থ বিশিষ্ট স্বর অর্থাৎ এক সপ্তকের ১২টি স্বরের মধ্যে শুদ্ধ ও বিকৃতস্বর মিলে ৭টি স্বরের ক্রমিক রচনাকে বলা হয় ঠাট। ঠাটের অপর নাম মেল।
ঠাট হতে রাগের উৎপত্তি। ঠাটকে পিতা বা জনক এবং ঠাট থেকে উৎপত্তি রাগকে পুত্র বা জন্য বলা হয়। ঠাটের সঙ্গে রাগের সম্পর্ক পিতা পুত্রের। এই জন্য একে জনক জন্য পদ্ধতিও বলা হয়।
দক্ষিণ ভারতের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ পন্ডিত ব্যাঙ্কমখী সপ্তকের অন্তর্গত ১২টি স্বর থেকে সর্ব প্রথম মোট ৭২টি ঠাট রচনা করেন। পরবর্তীকালে পন্ডিত ভাতখন্ডে সঙ্গীত শিক্ষা পদ্ধতিকে সহজতর করার উদ্দেশ্যে ঠাটের সংখ্যা কমিয়ে ৭২টির স্থলে মোট ১০টি ঠাটের প্রচলন করেন । বর্তমান উত্তর পদ্ধতিতে প্রচলিত ১০টি ঠাট পণ্ডিত ভাতখন্ডেরই গবেষণার ফসল।
ঠাটগুলোর নাম ও স্বর সপ্তকের পরিচয়ঃ
১। বিলাবল ঠাটের স্বর সপ্তক স র গ ম প ধন ।
২। খাম্বাজ ঠাটের স্বর সপ্তক স র গ ম প ধণ । –
৩। কাফি ঠাটের স্বর সপ্তক স র জ্ঞ ম প ধ ণ ।
8। আসাবরী ঠাটের স্বর সপ্তক স র জ্ঞ ম প দ ণ ।
৫। ভৈরবী ঠাটের স্বর সপ্তক স ঋ জ্ঞ ম প দ ণ ।
৬। ভৈরব ঠাটের স্বর সপ্তক স ঋ গ ম প দন ।
৭। কল্যাণ ঠাটের স্বর সপ্তক স র গ প ধ ন ।
৮। মারবা ঠাটের স্বর সপ্তক স ঋ গ প ন ।
৯। পূরবী ঠাটের-স্বর সপ্তক – স ঋ গ হ্ম প দ ন ।
১০। টোড়ী ঠাটের স্বর সপ্তক স ঋ জ্ঞ হ্ম পদন ।
ঠাট রচনার কতকগুলো বৈশিষ্ট রয়েছেঃ
১। ঠাট কখনও সাতটি স্বরের কম বা বেশী দিয়ে রচিত হয় না ।
২। সাতটি স্বরই ক্রমানুসারে হবে- সা, রা, গা, মা, পা, ধা, না।
৩। ঠাটে কেবল আরোহী হয়।
৪। একই ঠাটের মধ্যে একই স্বরের শুদ্ধ ও বিকৃত এই দুই রূপ ব্যবহার করা যায় না ।
৫। ঠাটের সংখ্যা মাত্র ১০ (দশ) টি।
৬। বিশেষ বিশেষ রাগের নাম অনুসারে ঠাঁট নাম করণ হয়েছে।
৭। ঠাটের উদ্দেশ্যে কেবল রাগ উৎপন্ন করার ক্ষমতা থাকা। ঠাট বাজানো যায় না বা গাওয়া যায় না, তাই ঠাটের রপ্তকতার প্রয়োজন নেই ।
৮। ঠাট গাওয়া বা বাজানো হয় না। এ জন্য ঠাটে বাদী, সমবাদী, অনুবাদী, পকড়, আলাপ, তান, বোলতান, সরগম, অঙ্গ, সময় প্রভৃতি কোনো কিছুরই দরকার নেই।
৯। দশটি ঠাট থেকেই সকল রাগের সৃষ্টি।
দক্ষিণ বা কর্ণাটকী সঙ্গীত পদ্ধতিতে উত্তর বা হিন্দুস্থানী সঙ্গীত পদ্ধতির দশটি ঠাটের নাম হলোঃ
দক্ষিণ পদ্ধতি
১। ধীরশঙ্করাভরণ মেল
২। মেচকল্যাণী মেল
৩। হরিকাম্ভোজী মেল
৪। খরহরপ্রিয় মেল
৫। নট ভৈরবী মেল
৬। গমনপ্রীয় মেল
৭। মায়ামালৰ গৌল মেল
৮। হনুমত্ টৌড়ী মেল
৯। কামবর্ধিনী মেল
১০। শুভপত্তবরানী মেল
উত্তর পদ্ধতি
১। বিলাবল ঠাট
২। কল্যাণ ঠাট
৩। খাম্বাজ ঠাট
৪। কাফি ঠাট
৫ । আসাবরী ঠাট
৬। মারবা ঠাট
৭। ভৈরব ঠাট
৮। ভৈরবী ঠাট
৯ । পূরবী ঠাট
১০। টোড়ী ঠাট
আরও দেখুন: